তাজবিদ

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK

তাজবিদ

কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত সর্বশ্রেষ্ঠ নফল ইবাদাত। যিনি কুরআনের একটি হরফ পড়বেন, তিনি ১০টি নেকি পাবেন। কুরআনের পাঠক ও শিক্ষক সর্বোত্তম মানব। কুরআন তিলাওয়াতকারীর মাতা-পিতাও সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী। মহানবি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার মাতা-পিতাকে নূরের মুকুট পরানো হবে। এ মুকুটের ঔজ্জ্বল্য সূর্যের আলোর চেয়েও বেশি হবে। কিয়ামতের কঠিন দিনে কুরআন তার তিলাওয়াতকারীর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবে। আল্লাহ তা'আলা এ সুপারিশ কবুল করবেন।

কুরআন তিলাওয়াতের এ ফযিলত অর্জন করতে হলে সহিহ-শুদ্ধরূপে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। আর এ জন্য তাজবিদের জ্ঞান অর্জন করা জরুরি।

তাজবিদ অর্থ সুন্দর বা উত্তম করা। কুরআন মাজিদের প্রতিটি হরফকে তার সিফাত অনুযায়ী নিজস্ব মাখরাজ থেকে উচ্চারণ করে বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করার নাম তাজবিদ।

আরবি হরফের উচ্চারণের স্থানসমূহকে মাখরাজ বলে। অর্থাৎ যে হরফ যে স্থান থেকে উচ্চারিত হয়, তাকে সে হরফের মাখরাজ বলে। আরবি ২৯টি হরফের মোট ১৭টি মাখরাজ রয়েছে।

আরবি হরফের ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণ ভঙ্গি রয়েছে। যেমন: কোনো হরফ উচ্চারণের সময় শ্বাস চালু থাকে আবার কোনো হরফের সময় শ্বাস চালু থাকে না। কোনো হরফের উচ্চারণ কোমল আবার কোনো হরফের উচ্চারণ একটু কঠিন। হরফের এ ধরনের বিভিন্ন গুণকে সিফাত বলে।

অতএব বলা যায়, কুরআন মাজিদের প্রতিটি হরফের মাখরাজ ও সিফাত অনুযায়ী বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করাকে তাজবিদ বলা হয়।

তাজবিদসহ কুরআন তিলাওয়াত করা ওয়াজিব। তাজবিদ অনুসারে কুরআন তিলাওয়াত না করলে অনেক সময় অর্থের পরিবর্তন ঘটে, ফলে পাঠকারী গুনাহগার হয়। তার নামায বিশুদ্ধ হয় না। মহান আল্লাহ বিশুদ্ধরূপে ধীরস্থিরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন

,وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا 

অর্থ: 'আপনি ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে কুরআন তিলাওয়াত করুন।' (সূরা আল-মুযযাম্মিল, আয়াত: ৪)

তাজবিদসহ কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। সুতরাং আমরা তাজবিদসহ কুরআন তিলাওয়াত করব। তাজবিদের নিয়মকানুন ভালোভাবে জানব।

পূর্ববর্তী শ্রেণিসমূহে তোমরা তাজবিদের বেশ কিছু নিয়ম জেনেছ। তারই ধারাবাহিকতায় এ শ্রেণিতে গুন্নাহ, কলকলাহ, আল্লাহ শব্দের লাম পড়ার নিয়ম ও রা হরফ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

 

জোড়ায় কাজ 

'পূর্ববর্তী শ্রেণির (৬ষ্ঠ-৮ম) তাজবিদের পুনরালোচনা' 

(প্রিয় শিক্ষার্থী, শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক পূর্বের শ্রেণিতে তাজবিদ বিষয়ক যা যা শিখেছ, তা তোমরা জোড়ায় আলোচনা করে উপস্থাপন করো)।

গুন্নাহ

গুন্নাহ কুরআন মাজিদ বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াতের একটি বিশেষ নিয়ম। গুন্নাহ অর্থ নাকে বাজিয়ে উচ্চারণ করা। আরবি হরফের আওয়াজকে নাকের বাঁশিতে নিয়ে উচ্চারণ করাকে গুন্নাহ বলে। গুন্নাহের পরিমাণ এক আলিফ। একটি আঙুলকে সোজা করে মধ্যম গতিতে বন্ধ করতে যেটুকু সময় লাগে, সেটুকু সময়কে এক আলিফ পরিমাণ সময় ধরা হয়।

গুন্নাহ মোট চার প্রকার। যথা: ১। ক্বলব গুন্নাহ ২। ইখফা গুন্নাহ ৩। ইদগামে বা-গুন্নাহ ও ৪। ওয়াজিব গুন্নাহ।

১. ক্বলব গুন্নাহ

ক্বলব অর্থ পরিবর্তন করা। নুন সাকিন ও তানবীনের পর বা () হরফ আসলে উক্ত নুন সাকিন ও তানবীনকে মিম দ্বারা পরিবর্তন করে গুন্নাহসহ পড়তে হয়। এটাকে ক্বলব গুন্নাহ বলা হয়। যেমন:

২. ইখফা গুন্নাহ

ইখফা অর্থ গোপন করা, অস্পষ্ট করা। নুন সাকিন ও তানবীনের পরে ইখফার জন্য নির্দিষ্ট যেকোনো একটি আসলে উক্ত নুন সাকিন ও তানবীনকে নাকের মধ্যে গোপন করে গুন্নাহর সঙ্গে পড়তে হয়। এটাকেই ইখফা গুন্নাহ বলে। ইখফার হরফ ১৫টি। যেমন:ت ث ج د ذ ز س ش ص ض ط ظ ف ق ك

এছাড়াও মীম সাকিনের পরে 'বা' )ب( হরফটি আসলে উক্ত মীম সাকিনকে গুন্নাহসহ পড়তে হয়। এটাকে মীম সাকিনের ইখফা গুন্নাহ বলে। যেমন

عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ - وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ

 ৩. ইদগামে বা-গুন্নাহ (গুন্নাহসহ ইদগাম)

ইদগাম শব্দের অর্থ মিলানো বা সন্ধি করা। ن -م -و-ي )ইয়া, ওয়াও, মীম, নুন) এই চারটি হরফের কোনো একটি নুন সাকিন ও তানবীনের পরে ভিন্ন শব্দের শুরুতে আসলে উক্ত নুন সাকিন কিংবা তানবীন যুক্ত হরফকে পরবর্তী শব্দের প্রথম শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে গুন্নাহর সঙ্গে পড়তে হয়। এটাকে বলে ইদগামে বা গুন্নাহ। যেমন-

৪. ওয়াজিব গুন্নাহ

م )মীম ও নুন) এ দুটি হরফের উপর যদি তাশদিদ (৩) থাকে, তবে এ দুটিকে অবশ্যই গুন্নাহর সঙ্গে পড়তে হবে। একে ওয়াজিব গুন্নাহ বলা হয়। যেমন: جَهَنَّمَ - إِنَّ لَمَّا ইত্যাদি।

কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের সামনে সঠিকভাবে গুন্নাহ আদায় করতে পারে কি না, তার অনুশীলন করবে।

আল্লাহ )اَللّٰهُ( শব্দের লাম (১) উচ্চারণের নিয়ম

 ( الله )আল্লাহ শব্দের লাম উচ্চারণ করার পদ্ধতি দুটি।

১.  ( اَللّٰهُ )আল্লাহ) শব্দের লাম হরফের পূর্বে যবর বা পেশ থাকলে উক্ত লামকে পোর করে অর্থাৎ মোটা স্বরে পড়তে হবে। যেমন:

وَاللَّهِ - اللَّهُمَّ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ

২. যদি লামের পূর্বে যের বিশিষ্ট হরফ থাকে তবে উক্ত লামকে বারিক বা পাতলা স্বরে পড়তে হবে। যেমন:

لِلَّهِ - بِسْمِ اللَّهِ - وَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ

আল্লাহ শব্দ ছাড়া যত শব্দে লাম আছে সব লাম বারিক বা পাতলা করে পড়তে হবে। যেমন:

مَا وَلَّهُمْ

রা (ر) হরফ পড়ার নিয়মরা 

(ر) হরফ পড়ার দুটি নিয়ম আছে। যথা:             

১. পোর বা মোটা 

২. বারিক বা পাতলা। 

নিম্নলিখিত অবস্থায় রা (ر) হরফকে পোর বা মোটা করে পড়তে হয়।

১) রা (ر) হরফ এর ওপর যবর বা পেশ থাকলে তা পোর করে পড়তে হয়। যেমন: قُوُدْ 

২) রা (ر ) সাকিন এর পূর্বের হরফের ওপর যবর বা পেশ থাকলে তা পোর করে পড়তে হয়। যেমন: أَرْكِسُوا - يَرْجِعُوْنَ

৩) রা (ر) সাকিন এর পূর্বের হরফে অস্থায়ী যের থাকলে তা পোর করে পড়তে হয়। আর যে অক্ষরে পূর্বে সাকিন ছিল কিন্তু অন্য শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে পড়ার জন্য সাময়িকভাবে যের দেওয়া হয়েছে, এমন যের কে অস্থায়ী যের বলে। যেমন: مَنِ ارْتَضُى - إِنِ ارْتَبْتُمْ

৪) রা (ر) সাকিন এর পূর্বের হরফে যের এবং পরে ইসতি'লার কোনো একটি হরফ আসলে উক্ত রা (ر) কে পোর করে পড়তে হয়। যেমন, قِرْطَاسٌ - مِرْصَادٌ

৫) রা (ر) হরফে যদি ওয়াকফ করা হয় এবং এটির পূর্বে ইয়া (ر) ব্যতীত অন্য কোনো হরফ সাকিন থাকে, আর উক্ত সাকিনের পূর্বাক্ষরে যবর বা পেশ থাকে, তাহলে রা (ر) কে পোর করে পড়তে হয়। যেমন: قَدْرٌ - خُسْرٌ شَهْرٌ

নিম্নলিখিত অবস্থায় রা (ر) হরফকে বারিক বা চিকন করে পড়তে হয়।

১) রা (ر) হরফে যের হলে বারিক করে পড়তে হয়। যেমন: رِزْق 

২) রা (ر) সাকিন এর পূর্বের হরফ স্থায়ী যের হলে বারিক করে পড়তে হয়। যেমন: مِرْفقًا

৩) রা (ر) হরফে ওয়াকফ করার সময় এর পূর্বে ইয়া (ر) সাকিন থাকলে উক্ত রা (ر) বারিক করে পড়তে হয়। যেমন: سَعِيرٌ - خَيْرٌ - خَبِيرٌ

৪) রা (ر) হরফে ওয়াকফ করার সময় যদি এর পূর্বে ইয়া (ر) ব্যতীত অন্য কোনো হরফ সাকিন হয় এবং সেই সাকিন হরফের পূর্বাক্ষরে যের হয়, তা হলে উক্ত রা (ر) বারিক করে পড়তে হয়। যেমন: حِجْر - شعر

কলকলার বিবরণ

কলকলা অর্থ প্রতিধ্বনি। কলকলার অক্ষর ৫টি। যথা: ১ ق ط ب ج মনে রাখার জন্য এগুলোকে একত্রে قُطْبُ جَدٍ বলা হয়। এই পাঁচটি হরফে যখন সাকিন বা ওয়াকফ হয় তখন কলকলা করতে হয়। অর্থাৎ প্রতিধ্বনির মতো আওয়াজ বন্ধ হয়ে পুনরায় ফিরে আসাকে সাধারণত কলকলা বলা হয়। যেমন কোনো শক্ত জিনিসকে শক্ত মাটির ওপর নিক্ষেপ করলে নিক্ষিপ্ত বস্তু শব্দ করে ফিরে আসে, ঠিক তেমনিই কলকলার হরফকেও কলকলা করার সময় নির্দিষ্ট মাখরাজ হতে প্রতিধ্বনির মতো আওয়াজ বন্ধ হয়ে পুনরায় উচ্চারিত হয়, তাকে কলকলা বলে।

শব্দের মধ্যভাগে কলকলার হরফ সাকিন হলে সামান্য কলকলা করতে হয় এবং কিছুটা যবরের মতো করে পড়তে হয় যেমন ঃ  يَدْخُلُونَ - تَجْهَلُونَ - يَبْخَلُونَ - قِطْمِيرُ - يَقْطَعُونَ 

কলকলার হরফগুলো যদি ওয়াকফ অবস্থায় থাকে, তাহলে পূর্ণভাবে কলকলা করতে হয় এবং কিছুটা যবরের মতো করে আদায় করতে হয় যেন পুরা মাত্রায় যবর প্রকাশ না পায়। যেমন:   جُحُودٌ - شَدِيدٌ - حِسَابٌ - صِرَاطٌ - خَلَّاق

 

বাড়ির কাজ

 'পাঠ্যপুস্তকে নির্ধারিত সূরাসমূহ তাজবিদ অনুসারে তুমি বাড়িতে শুদ্ধভাবে চর্চা করো' 

(এক্ষেত্রে তুমি তাজবিদ সংক্রান্ত বিষয়ে তোমার পরিবার, প্রতিবেশি বা সহপাঠীদের মধ্যে কেউ দক্ষ থাকলে তার সহায়তা নিতে পারো)।

অর্থ ও পটভূমিসহ আল কুরআনের কতিপয় সূরা

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion